ডেঙ্গু

ডেঙ্গু জ্বর বা এডিস মশার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখুন ?

ডেঙ্গু বা এডিস মশা :-

ডেঙ্গু একটি আতঙ্কের নাম।দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হয়।ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ।এডিস প্রজাতি মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বর হয়।এডিস মশা অন্য সাধারণ মশা থেকে আলাদা বা ভিন্ন হয়। তাই ডেঙ্গু মশা চিনে রাখুন আর সতর্ক থাকুন। ডেঙ্গু মশা দেখতে কেমন? মশা দেখতে মাঝারি আকারে হয়ে থাকে।এ মশার সাদা সাদা দোড়া কাটা দাগ থাকে। এজন্য এদেরকে টাইগার মশাও বলা হয়। এছাড়া ছাড়া পুরুষের মাথায় এন্টিনা কিছুটা লোমস থাকে এবং স্ত্রী মাথায় থাকে না। এজন্য অন্য মশাগুলোর ভিতর থেকেও এগুলোকে খুব সহজেই চিনে ফেলা যায়।

ডেঙ্গু মশা কখন কামড়ায়?

এডিস মশা বিশেষ করে  দিনের প্রথম দিকে এবং বিকেলের শেষ দিকে কামড়ায়। কিন্তু এখন দিন বা  রাত সব বেলাতেই কামড়াচ্ছে।

এসিড মশা কামড়ালেই  ডেঙ্গু জ্বর  হতে পারে ? 

এডিস মশা কামড়ালে যে ডেঙ্গু জ্বর হবে এমনটা নয়।

শুধুমাত্র ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসবাহী এডিস মশা মানবদেহে কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হবেন।

এডিস মশার জন্ম? 

এডিস মশা জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আবির্ভাব থাকে।

একটা সময় বলা হত এসিড মশা পরিষ্কার স্থানে বংশবিস্তার করে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় সেই বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ্য  করা যাচ্ছে।

এসিড মশা পুরানো টায়ার, ড্রাম, বালতি বা বোতলে পানি, ইটের গর্ত, নারকেলের খুলে জমে থাকা পানি  এগুলোতে ডেঙ্গু মশা বা এডিস মশা জন্মগ্রহণ করে থাকে।

এডিস মশা বেঁচে থাকে কত দিন? 

এডিট মশার জীবনকাল ১ মাস।আর উড়তো অবস্থায় এই মশা ১০ থেকে ১৫ দিন বাঁচে। এর মধ্যেই সে কামড়ানো শুরু করে।

এসিড মশা কোথায় কামডায়?

আমরা অনেকেই ভাবি এডিস মশার শুধু পায়েতেই কামড়ায়।

এটা ভুল ধারণা।

পায়ের অংশ অন্যান্য অংশের তুলনায় খালি থাকে তাই এই জায়গাতেই এরা কামড়ানোর জন্য বেছে নেয়।

তবে সুযোগ পেলে শরীরের যে কোন অংশে কামড়াতে পারে এই মশা।

এডিস মশা কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে কত দিনের মধ্যে ? 

সাধারণত জীবাণু বহনকারী এসিড মশা মানুষের শরীর এ কামড়ানোর চার থেকে ছয় দিনের মধ্যেই সেই ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

মশা কামড়ালে কি ফুলে যায় বা লালচে ভাব হয়? 

ডেঙ্গু বহনকারী মশা নামক এডিট মশা কামড়ালে  ওই কামড়ানো অংশটুকু হালকা ফুলে যায় বা চুলকায়।

অনেকেই ক্ষেত্রে ফুলে যাওয়া বা  চুলকানো নাও হতে পারে।

এই মশা রক্ত খাওয়ার জন্য যখন হুল ফোটায় তখন বেশি ভাগ মানুষ বোঝতে পারে না।

কারণ হুল ফুটানোর আগে মানুষের  শরীরে ব্যথা নাশক তরল পদার্থ  ত্বকের ভেতর ছিটিয়ে দেয়।ফলে   সেই স্থানটি অবশ হয়ে যায়।

এজন্য মানুষ বোঝতে পারে না।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ :-

  • প্রচুর জ্বর থাকবে। জ্বরের তাপমাত্রা ১০০° থেকে ১০৫° সেন্টিগ্রেড ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকবে।
  • শরীরে  র‍্যাশ উঠবে। 
  • সারা শরীর ব্যথা করবে। 
  • চোখের নিচে ব্যাথা।
  •  বমির ভাব। 
  • খুব অস্থির লাগা।
  • পেট ব্যথা। 
  • পাতলা পায়খানা। 

যে ব্যক্তিরা দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়েছেন তাদের মারাত্মক ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি।

চিকিৎসক রা আর বলেন সাধারণত  জ্বর দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয় কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি পাঁচ  থেকে  সাত দিনেও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে রক্তপাত হয়।

কারণ রক্তে অনুচক্রিকা কমে যায় এবং  দাঁতের মাড়ি থেকেও  রক্তপাত হতে পারে এবং কি পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে।

যদি ডেঙ্গুর আক্রান্ত ব্যক্তি নারী হয় সেক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে এমনকি রক্তের প্লাটিনাট কমে গিয়ে শরীরে চামড়া উপর দিয়ে ব্লিডিং হতে পারে, হাত-পা দ্রুত ঠান্ডা হওয়া শুরু করে এবং  শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়, লিভারের সমস্যা, ব্রেইনের রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ফলে অনেক রোগী ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ হতে পারে।

ডেঙ্গু টেস্ট কখন করাবেন? 

 উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো যদি থাকে এবং জ্বরের সাথে সর্দি কাশি না থাকে জ্বরের তৃতীয় দিনে টেস্ট করাতে হবে। 

ডেঙ্গু কয় ধরনের হতে পারে? 

ডেঙ্গু সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে।

যেমন :-এ,বি,সি ক্যাটাগরি।

‘এ’ ক্যাটাগরি রোগীরা স্বাভাবিক থাকে।

এদের শুধুমাত্র  জ্বর থাকলে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন নাই।

বাড়িতে বিশ্রাম নিলেই চলবে.।’

বি ‘ ক্যাটাগরি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে  কারণ পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, অন্তঃসত্তা, কিডনির সমস্যা থাকলে রোগীকে  হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।

‘সি’ ক্যাটাগরি ডেঙ্গু জ্বর খুব খারাপ।′

সি’ ক্যাটাগরি ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগীর লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তাই  রোগীকে আইসিউও প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কিভাবে  ঘরোয়া ভাবে প্রতিরোধ কি ভাবে করবেন:-

  • জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খেতে হয়।
  • জ্বরের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর পর ওষুধ সেবন করতে হয়।
  • ডেঙ্গু জ্বরের তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে কোন প্রকার ব্যথা নাশক ট্যাবলেট সেবন করা যাবে না।
  • জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে ফেলতে পারেন বা গরম পানি দিয়ে গোসল করাটা ভালো।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অধিকাংশ সময় ক্লান্ত থাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াটা প্রয়োজন।
  • লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভারী কাজ থেকে বিরত থাকা ভাবে হাঁটা চলাফেরা করতে পারেন।

আর যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি শিশু হয় তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত এবং শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ, পূর্ণ বিশ্রাম এবং সব সময় মশারি এবং দূরত্ব পরামর্শ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? 

ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে দেওয়ার জন্য।

এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া এবং স্যালাইন ,ফলের রস দুধ জাতীয় তরল পানিও খাওয়া উচিত।

আর  প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবারগুলো যেমন:- মাছ, মুরগি মাংস, ডিম এগুলো প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

তাই  এগুলো খাওয়া উচিত।কারণ এই খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডেঙ্গু জ্বরের সর্তকতা করণীয়? 

ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার পরবর্তী সময় খুব বিপজ্জনক।

এ সময় তীব্র পেট ব্যথা বারবার বমি পাতলা পায়খানা হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া খেতে না পারা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হাঁটা চলাফেরা, খেতে কষ্ট হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা।

আপনি  যদি ভ্রমণে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত  হয়ে পড়েন এক্ষেত্রে আগে থেকে আপনি কোথায় জরুরী সেবা পাবেন তা নিশ্চিত করুন।

আমাদের কখন চিকিৎসক এর  কাছে যাওয়া উচিত? 

আপনার এলাকায় যদি ডেঙ্গু দেখা যায় আপনার ডেঙ্গু কোন  উপসর্গ থাকলে তাহলে চিকিৎসকে পরামর্শ নিতে পারেন।

কিভাবে নিজের যত্ন নিতে হয় এবং কখন  চিকিৎসা নিতে হবে সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ কিভাবে পড়ব?

  • ফুলের টপ, পুরাতন বোতল যে কোন স্থানে পানির নিয়মিত পরিবর্তন করা।
  • বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার  পরিছন্নতা রাখা।
  • পানি জমে থাকবে এমন জিনিসপত্র থাকলে যে সেই জিনিসপত্র উল্টো করে রাখা যাতে করে পানি জমতে না পারে।
  • দিনে  ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা।
  • জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করা।
  • মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে বা কয়েল  ব্যবহার করা।
  • শিশু বা বয়স্কদের বিশেষ করে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
  • ময়লা বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা এবং কৃত্রিম মানবসৃষ্ট আবাসস্থলগুলি অপসারণ করা যে গুলো মধ্যে জল ধরে রাখতে পারে।

আপনার আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখুন।নিজেরাই ছোট ছোট  বিষয়গুলো সচেতন থাকুন, এডিস মশার হাত থেকে বাঁচুন। সচেতনতাই ডেঙ্গু আক্রান্তের একমাত্র প্রতিরোধ।